উত্তম চরিত্রের গুণাবলী
আজ উত্তম চরিত্রের গুণাবলী আলোচনা করব। কোন বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের মধ্যে থাকা উচিত। এবং কোনগুলো বর্জন করা উচিত। তা নিয়ে আমি আলোচনা করব।
কোরআন ও হাদিস থেকে কিছু দলিল আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব। আমাদের প্রকৃতিগত ছয়টি শত্রু আছে। এগুলো হলো কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ এবং মাৎসর্য।
এই বৈশিষ্ট্যগুলো আমাদের পরিহার করা উচিত। যার চরিত্র ভালো, তার সব ভালো। নিচে উত্তম চরিত্রের গুনাবলি আলোচনা করা হলো।
আত্মসংযমী হওয়া
আমাদের আত্মসংযমী হতে হবে। অর্থাৎ মনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। এই যুদ্ধকে ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ জিহাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুজাহিদ সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর খুশির জন্য নিজের আত্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। অর্থাৎ আত্মা এবং খারাপ উদ্দেশ্যে বিরুদ্ধে জিহাদ হলো মানুষের সর্ব উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।
যে বিজয়ী হবে,সে সঠিক পথে চলতে পারবে। এভাবেই সে আত্মসংযমী হয়ে উঠবে। একজন আত্মসংযমী লোক সৎ চরিত্রের অধিকারী।
তাই কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, যারা আমার উদ্দেশ্যে জিহাদ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথ সমূহে পরিচালিত করব।
আর আল্লাহ তা’আলা অবশ্যই সৎকর্মশীলদের সাথে আছেন(আনকাবূত, আয়াত নংঃ৬৯)। এই আয়াত থেকে আমরা বুঝতে পারি, উত্তম চরিত্রের বৈশিষ্ট্য হলো আত্মসংযমী হওয়া।
অহংকার বর্জন করা
অহংকার হল আমাদের সর্বনাশী শত্রু। ইসলামে মহাপাপ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অহংকারী ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। রাসুল সাঃ ইরশাদ করেন, যার হৃদয়ে বিন্দু পরিমাণ অহংকার থাকবে, সে জান্নাতে ঢুকতে পারবে না।
তখন এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন। হে আল্লাহর রাসূল মানুষ সুন্দর কাপড়-চোপড় এবং নিজেকে সুন্দর রাখতে পছন্দ করে।
এটা কি অহংকার এর মধ্যে পড়ে?। উত্তরে তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৌন্দর্য কে ভালবাসে। অহংকার হল সত্যকে গ্রহণ না করা। এবং মানুষকে ছোট করা।
ইসলাম অহংকারের সাথে চলাফেরা করতে নিষেধ করেছে। তাই,উত্তম চরিত্রের অধিকারী হতে হলে আমাদের অহংকার বর্জন করতে হবে।
চুগলখোরি বর্জন করা
সৎ চরিত্র হতে হলে চুগলখোরি বর্জন করতে হবে। একজনের দোষ অন্য জনের কাছে বলা হল চুগলখোরি। আমাদের সমাজে তা একটি মারাত্মক ব্যাধি হয়ে দাড়িয়েছে।
আমরা সবাই এই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আপনি কি জানেন চুগলখোরি ব্যক্তি কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না। চোগলখোর করতে ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
কারণ এর মাধ্যমে একে অপরের সম্পর্ক বিনষ্ট হয়। সমাজে ফেতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে। পরিশেষে,সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। যারা চুগলখোরি করবে।
তাদের কবরে কেয়ামত হওয়ার আগে থেকেই আজাব শুরু হবে। তাই রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চুগলখোর ব্যক্তি কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
তাই, আমরা একে অন্যের গীবত গাওয়া থেকে বিরত থাকব। এবং ইসলামেও তা হারাম।
মিথ্যা বলা পরিহার করা
উত্তম চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মিথ্যা বলা পরিহার করা। ইসলামে মিথ্যা কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কোরআনে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তোমরা দূরে থাক মূর্তিরুপ অপবিত্রতা হতে এবং দূরে থাক মিথ্যা কথন হতে(সূরা হাজ্জ, আয়াত নংঃ ৩০।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ বলেছেন, নিশ্চয়ই সত্যবাদিতা নেকের পথ বলে। নেক জান্নাতের দিকে প্রভাবিত করে। যে মানুষ সত্য কথা বলবে, সে আল্লাহর নিকট সত্যবাদী রূপে গণ্য হবে।
যে মিথ্যা কথা বলবে, সে পাপ কাজের দিকে ধাবিত হবে। যে মানুষ যতক্ষণ মিথ্যা কথা বলবে, সে আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী রূপে গণ্য হবে। মিথ্যাচার একজন মুসলিমের বৈশিষ্ট্য নয়।
ইসলামে বলা তা সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। তাই, আমরা মিথ্যা বলা পরিহার করব। এবং সৎ চরিত্রের অধিকারী হব।
কুধারণা বর্জন করা
ইসলামে কারো প্রতি খারাপ ধারণা করা, মানুষের দোষ বের করা এবং পরনিন্দা হারাম করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন, হে বিশ্বাসীগণ তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাকো।
কেননা কোন কোন ধারণা পাপ। একে অপরের গোপন বিষয় খুঁজে বের করবে না। একে অপরের অনুপুস্থিতিতে গীবত করো না। তোমাদের মধ্যে কেউ তার মৃত ভাইয়ের গোশত খেতে চাইবে?
বস্তুতঃ তোমরা তো এটাকে খারাপই মনে কর। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। আল্লাহ তওবা গ্রহণকারী,পরম দয়ালু(সূরা হুজুরাত আয়াত নংঃ১২)।
ইশারায় নিন্দা পরিহার করা
ইসলামে মুখ,চোখ ও হাতের মাধ্যমে নিন্দা করতে নিষেধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেছেন, দুর্ভোগ প্রত্যেকের, যে সামনে এবং পিছনে লোকের গীবত বা নিন্দা করে।
অর্থাৎ একজন আরেকজনকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করতে পারব না।
ক্ষমা করতে আগ্রহী হওয়া
কেউ ভুল করলে, ইসলাম তাকে ক্ষমা করার পরামর্শ দিয়েছে। আমরা একজন অপরকে ক্ষমা করলে, আল্লাহর ক্ষমা পাওয়া যায়। মানুষকে ক্ষমা করা উত্তম চরিত্রের গুণাবলীর মধ্যে একটি।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তারা যেন ঐ লোকদের ক্ষমা করে। এবং তাদের দোষগুলো ক্ষমা করে। তোমরা কি পছন্দ করো না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে মাফ করে দিন? আর আল্লাহ চরম ক্ষমাময় এবং পরম দয়াশীল (সূরা নূর, আয়াত নংঃ২২)।
আল্লাহ তা’আলা কুরআনে ইরশাদ করেন, হে মুমিনগণ, তোমাদের সঙ্গিনী এবং পুত্রদের মধ্যে কেউ কেউ তোমাদের দুশমন। তাদের ব্যাপারে তোমরা সজাগ থাকবে। তোমরা যদি তাদেরকে কৃ্পা কর, তাদের অপরাধ অগ্রাহ্য করে।
এবং তাদের মাফ করে। তাহলে নিশ্চয়ই আল্লাহর চরম ক্ষমাময় এবং পরম দয়াশীল। আমরা উপরের আয়াতগুলোতে কে বুঝতে পারি যে, ক্ষমা করা একটি মহৎ কাজ। যা আমাদের সবার থাকা উচিত।
গালাগালি না করা
ইসলাম গালাগালি করতে মানা করেছে। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মুসলিমকে গালি দিল, সে ফাসেকী হিসেবে গণ্য হবে। এবং কেউ কারো সাথে ঝগড়া করলে, সে কুফরী হিসেবে বিবেচনা হবে।
অশ্লীল কথা না বলা
ইসলামে অশ্লীল কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষের নোংরা কথা কে ঘৃণা কর। রাসুল সাঃ ইরশাদ করেন, যে বিষয়ে অশ্লীল কথা থাকবে।
ওই বিষয়ের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে। লজ্জা জিনিসটি যে ব্যাপারে থাকে, ওই ব্যাপারটি সুন্দর হয়ে উঠে। তাই, আমরা অশ্লীল কথা বলা থেকে বিরত থাকব।
লজ্জাশীল হওয়া
আমাদের সবার লজ্জাশীল হতে হবে। লজ্জাশীলতা উত্তম চরিত্রের একটি গুণ। তাই, ইসলামে নারী-পুরুষ উভয়কে লজ্জাশীল হতে পরামর্শ দিয়েছে।
রাসুল সাঃ ইরশাদ করেন, লজ্জাশীলতা ও ঈমান একি বন্ধনে আবদ্ধ। একটি হারালে অপরটি হারিয়ে যায়।
লৌকিকতা বর্জন করা
আমাদের সমাজে অনেকেই লোক দেখানোর জন্য ইবাদত করে থাকে। অনেকে অনেক কিছু দান করে থাকে। যাতে সমাজ তাকে দানবীর অথবা দয়ালু বলে।
কিন্তু ইসলামে তা কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। লোক দেখানো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। লৌকিকতা বর্জন উত্তম চরিত্রের গুনাবলীর মধ্যে একটি।
একে অপরকে কষ্ট না দেওয়া
ইসলামে একে অপরকে কষ্ট দিতে মানা করেছে। প্রতিবেশীদের সাথে ভালো আচরণ করব। আমাদের কথায় যেন তারা কোন প্রকার কষ্ট না পায়। এই দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
যে ব্যক্তি প্রতিবেশীকে কষ্ট দেবে, সে কখনো প্রকৃত মুসলিম হিসেবে গণ্য নয়। আর তা সুস্পষ্টভাবে ইসলামে বলা হয়েছে। সে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
পরোপকারী হওয়া
আমাদের পরোপকারী হতে হবে। আর তা ইসলামে বলা হয়েছে। পরোপকারী হল একজন অপরের উপকার করা। পরোপকারী ব্যক্তিকে আল্লাহতালা পছন্দ করেন।
রাসুল সাঃ এরশাদ করেন, তোমাদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি, যে মানুষকে উপকার করে। পরোপকারী উত্তম চরিত্রের গুণাবলীর মধ্যে একটি।
ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি না করা
ইসলামিক ফিতনা-ফাসাদ নিষেধ করা হয়েছে। কারণ সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়। এবং সম্পর্ক ছিন্ন হয়। ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টিকারী কে আল্লাহ অপছন্দ করেন। এবং আল্লাহ তাকে ভালবাসেন না।
জুলুম-অত্যাচার না করা
জুলুম-অত্যাচার ইসলামে হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা অত্যাচারীকে ঘৃণা করেন। পরকালে তার জন্য রয়েছে কষ্টদায়ক শাস্তি। দুনিয়াতেই আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি দিয়ে থাকে।
আমানত রক্ষা করা
ইসলামে আমানত রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। আমানত খেয়ানত না করা উচিত। আমানত খেয়ানতকারীকে আল্লাহ অপছন্দ করেন। তাই, সর্বদা আমানত রক্ষা করার চেষ্টা করব।
ধৈর্য ধারণ করা
ধৈর্য্য এমন একটি জিনিস যা আমাদের প্রত্যেকের থাকা উচিত। ধৈর্য ছাড়া কেউ জীবনে সফলতা লাভ করতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা ধৈর্যশীল ব্যক্তিদের পছন্দ করেন।
যে কোন বিপদে ধৈর্যধারণ করতে হবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা ধৈর্যশীল ব্যক্তি দের সাথে আছেন। তাই, ধৈর্য ধারণ করা উত্তম চরিত্রের গুণাবলীর মধ্যে একটি। আশা করি, উত্তম চরিত্রের গুণাবলী জানতে পেরেছেন।
আরো পড়ুনঃ তারাবির নামাজ সুন্নত নাকি নফল